Sunday, December 29, 2013

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে স্বৈরতান্ত্রিক চেতনা

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার ছিল না বলে, গনতান্ত্রিক অধিকার ছিল না বলে, ৭০ এর নির্বাচনে জয়ী হয়েও আমরা সরকার গঠন করতে পারিনি বলে, ৭১ এ “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে” তুলে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজ যে দলটি জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা - ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং একটি তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেছে, সেই দলটি কিভাবে দাবি করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করছে?

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার মত যে প্রশংসনীয় কাজটি করেছে তা হল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করিয়েছে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগকে এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে আমরা ৯৬ এর নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী এবং মানবতাবিরধী যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের সাথে দহরম মহরম দেখেছিলাম।

বিদেশী শক্তিকে তুষ্ট করতে যারা দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করতে দ্বিধা করে না তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি আজ বড় হাস্যকর শোনায়। (জনসমর্থনহীন একদলীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে বিদেশী শক্তির সমর্থনের মুখাপেক্ষী হতে হয়।)

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার দাবি এবং আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকারি সবাইকে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর এবং সাম্প্রদায়িক হিসেবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো ভোটার টানতে আওয়ামী লীগের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ছাড়া কিছুই না। যিনি এমন ব্যবসা চালু করেছেন যেখান থেকে মালিক শুধুমাত্র প্রাথমিক বিনিয়োগ তুলে নেওয়া ছাড়া কোন লভ্যাংশ নেবেন না এমন আদর্শ ব্যক্তিকেও "ঘুষখোর" হিসেবে আওয়ামী লীগ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে।

ক্ষমতার লোভে দেশ বিকিয়ে দিয়ে আসবেন না - এতটুকু আস্থাও আমরা রাখতে পারছি না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার দলটি আজ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ তথা সমগ্র প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে স্বৈরতান্ত্রিক চেতনাকে ধারণ করছে।

"মুক্তিযুদ্ধ নামাবলী গায়ে দিলেই যা খুশি তাই করবার এখতিয়ার তৈরি হয় না। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো স্বৈরতন্ত্র সাম্প্রদায়িকতা আধিপত্য আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে, মানুষের মুক্ত একটি ভূখন্ডের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাই কখনোই চোর ডাকাত আর সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কখনোই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বিসর্জন দেওয়া হতে পারে না। গণতন্ত্রের সঙ্গে কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-র বিরোধিতা হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই নিপীড়ন, প্রতারণা, বর্বরতা, বৈষম্য, আধিপত্য সমর্থন করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই অপরাধীদের অপরাধের বর্ম হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন ব্যবহার অনুমোদন করতে পারে না।"

- আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

আরওঃ




রেফরেন্স
১. ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন
২. Autocracy বা স্বৈরতন্ত্র
৩. Jamaat-e-Islami Pakistan

ফলোআপ
দেশ বিকিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া কি তবে শুরু হয়ে গেছে?
ক্ষমতার লোভে কি আমরা কি টেস্ট খেলার অধিকার হারাবো?
"The reality for the BCB is that we cannot afford to go against the BCCI," the BCB director said. "..majority in the board believe that favouring India would be the best option for us."
আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান সাবেরের

আওয়ামী লীগ জানে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কখনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কাজেই মরিয়া হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিদেশী শক্তিকে তুষ্ট করতে একদিকে তারা দেশ বিকিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও চরমভাবে শুরু করবে এবং অন্যদিকে জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনসহ সংবিধান লঙ্ঘন করবে।

নাগরিক শক্তি জনগণকে নিয়ে দেশের জনগণ, সম্পদ এবং সর্বোপরি সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।  

No comments:

Post a Comment