Saturday, December 14, 2013

শিক্ষা দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু অর্জন করা যায়

আমি জানি শিক্ষা দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু অর্জন করা যায়।
“শিক্ষা নিয়ে” এই শিক্ষাটা আমি পেয়েছি আব্বু আম্মুর কাছ থেকে।
আমার আব্বু, আম্মু, দাদু (দাদা), নানু (নানী) সবাই শিক্ষকতা করেছেন।


আব্বু আম্মু ছোটবেলা থেকে পড়াশোনাকে সবকিছুর উপর স্থান দিয়েছেন।
আব্বু গ্রাম থেকে জীবনে উঠে এসেছেন পড়াশোনা দিয়ে।
আম্মু ছিলেন সিরিয়াস ছাত্রী।
স্কুলে একবার ডাবল প্রমোশনও নিয়েছিলেন। নানু (নানী) ভাবতেন, husband – wife দুইজনই ডাক্তার হলে পরিবারের জন্য ভালো নাও হতে পারে (বিয়ে দিবেন ডাক্তার ছেলের সাথে!)। তাই আম্মুকে Science না দিয়ে, কলেজে Humanities concentration দিয়েছিলেন। নানা অনেকদিন পর জেনে কষ্ট পেয়েছিলেন (আম্মু মেডিক্যাল-এ পড়বে – এমনটাই চাইতেন নানা)।
ইউনিভার্সিটিতেও Sociology Department-এ রেজাল্টের দিক দিয়ে সবসময় উপরের দিকে ছিলেন আম্মু।


আমার ছেলেবেলাটা কেটেছে ঢাকায়।
টালেন্টস প্রিকাডেট স্কুলে পড়তাম আমি। প্লে গ্রুপ, নার্সারি, কেজি – ৩ বছর।
প্রতিদিন ভোরে আম্মু রিকশা করে আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন আর নিজে বাসায় ফিরতেন পায়ে হেঁটে। একইভাবে ছুটি হলে হেঁটে যেতেন স্কুলে, আমাকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন রিকশায়। প্রতিদিন সন্ধায় পড়তে বসাতেন – ঠিক যেভাবে এখন আমার ছোট্ট বোন রাইসাকে নিয়ে বসেন।


Final Term পরীক্ষার পর আমরা চিটাগং এ বেড়াতে যেতাম।
তেমনই একবারের ঘটনা।
আমি, আম্মু চিটাগং এ – নানুর বাসায়। নার্সারি Final Term পরীক্ষার পর সম্ভবত। আব্বু ঢাকা থেকে এসেছেন।
আসার আগে আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন – কি লাগবে।
নতুন বছরের নতুন বই নিয়ে আমার অনেক উৎসাহ। বলেছিলাম, নতুন ক্লাসের বইগুলো নিয়ে আসতে।
দেখি আব্বু নতুন বছরের বই তো এনেছেনই, সাথে নিয়ে এসেছেন একটা সাধারণ জ্ঞানের বই
এটাই আমার প্রথম সাধারণ জ্ঞানের বই। জগত সম্পর্কে জানা শুরু আমার সেই থেকে।

ছেলেবেলায় আমার প্রিয় ছিল সাধারণ জ্ঞান (General Knowledge) এর বইগুলো – “বাংলাদেশের ডায়েরি”, “পৃথিবীর ডায়েরি” – ওগুলো। তখন তো আর আজকের মত – ইন্টারনেট, ওয়েব ছিল না!


আরেকবারের ঘটনা।
তখন সাউদি আরবে থাকি। ক্লাস টু বা থ্রি (১৯৯৪/৯৫)
দোকানে পৃথিবীর একটা গ্লোব দেখে খুব পছন্দ হয়েছিল। লাজুক আমি গাড়িতে ফিরে আম্মুকে বললাম, এবার পরীক্ষায় ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হলে একটা গ্লোব কিনব।
আম্মু আব্বুকে বললেন।
আব্বু বললেন, জ্ঞানের জন্য কোন মানা নেই। তোমার দাদু অভাবের মধ্যেও জ্ঞানের জন্য কার্পণ্য করেননি। (দাদি নিজের গহনা বিক্রি করে আব্বুর মেডিকেল পড়ার খরচ দিয়েছিলেন।)
আব্বু আমাকে গ্লোবটা  কিনে দিলেন।
সেদিন থেকে আমি বিস্ময় নিয়ে গ্লোবটা দেখতাম।
আর কত কত কল্পনা করতাম! (কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট হব … বাংলাদেশের রাজা … আমি যে দেশের প্রেসিডেন্ট হব – সেই দেশ সবদিক দিয়ে পৃথিবীর সেরা হবে – বাকি দেশগুলোর ধরা ছোঁয়ার বাইরে … !)
জ্ঞানের আরেকটা জগত খুলে গিয়েছিল আমার সামনে।

No comments:

Post a Comment