Friday, December 20, 2013

দুর্নীতি দূরীকরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি

রাজনীতিতে নানা হতাশার মাঝে বাংলাদেশের যে কটা বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আমরা গর্ব করতে পারি তার একটা হল গত দশ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশের উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার (৬-৭%)।

আর একটা ব্যাপার আছে যেটিতে আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের লজ্জাজনক অবস্থান - দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা।


  • দুর্নীতি কমিয়ে দিতে পারলে আরও অনেক কিছুর সাথে যে ব্যাপারটি ঘটবে তা হল, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেশ খানিকটা বেড়ে যাবে। 
  • আইনের শাসন প্রতিস্থিত হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়বে। 
  • প্রবৃদ্ধির হারে আরও যোগ হবে যদি ভয় দেখিয়ে জনগণকে হরতাল পালনে বাধ্য করার সংস্কৃতি বন্ধ করা যায়।


দেশে দুর্নীতি করে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে (হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ইত্যাদি)।
জনগণের টাকা “কালো টাকা”য় রূপান্তরিত হচ্ছে এবং এই কালো টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এই সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে জিডিপি বেশ খানিকটা বাড়বে।

এক শেয়ার বাজারেই বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি হয়েছে। “The stock market capitalization of the Dhaka Stock Exchange in Bangladesh crossed $10 billion in November 2007 and the $30 billion mark in 2009, and USD 50 billion in August 2010.” [1] এরপরই হয় পতন। Market capitalization এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে (৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারে) - ৩০ লক্ষের বেশি বিনিয়োগকারীর অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেন। অনেকে আত্নাহুতি দেন।


  • আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জমি দখল বন্ধ হলে সাধারণ জনগণের সম্পত্তি জনগণের কাছেই থেকে যাবে।


তেমনই আরেকটা রুই-কাতলা আকারের দুর্নীতি ছিল পদ্মা সেতু দুর্নীতি। পদ্মা সেতু দুর্নীতি দেশের ৩ কোটি জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নতি, শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকে থামিয়ে দিয়েছে।

কুইক রেন্টাল দুর্নীতি আরেকটি বড় আকারের দুর্নীতি।


দুর্নীতি হ্রাস পেলে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো যোগ্য বেক্তিদের হাতে নাস্ত হবে এবং যোগ্য বেক্তিরা অধিকতর দক্ষতার সাথে কর্ম সম্পাদন করবেন (অযোগ্য বেক্তিদের দুর্নীতি করে, ঘুষ দিয়ে পদ দখল বন্ধ হবে)। 
কথায় আছে, গুণীর কদর না হলে সে দেশে গুণী জন্মায় না। ভাল কাজের, দক্ষতার, মেধার মূল্যায়ন হলে প্রত্যেকে আরও ভাল কাজ করবে, দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

দুর্নীতি দূরীকরণ বাবসা সহজ করায় ভূমিকা রাখবে। বাবসায়িদের পদে পদে ঘুষ-চাদা দিতে হবে না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

জনগণকে জোর করে হরতাল-অবরোধ পালনে বাধ্য করাকে রুখে দিতে পারলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। হিসাব মতে - একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাস্তবে ক্ষতি আরও বেশি বলেই আমরা মনে করি। সেই সাথে আছে “জালাও-পোড়াও” - যানবাহন, কারখানা কোন কিছুই এর হাত থেকে রেহাই পায় না। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আরও অনেক বেশি - বিদেশি বিনিয়োগ কারিরা কি হরতাল দেখে পিছিয়ে পড়েন না?

ভারতের মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) $3,991, পাকিস্তানের $3,144, আর বাংলাদেশের $2,083।
বাংলাদেশের জিডিপির মোট আকার - $324.628 বিলিয়ন। ধরা যাক, শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগ করা হল এবং তাতে ১ বছরে পণ্য এবং সেবার আকার বাড়ল $108 বিলিয়ন। তাহলে মাথাপিছু জিডিপি হবে $2,776।

এক হিসাব মতে, দেশের শীর্ষ ৯০ জন ধনী বেক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ $15 বিলিয়ন। হিসাবটি সম্ভবত কালো টাকা বাদ দিয়ে। কালো টাকাসহ হিসাব করলে দেশের শীর্ষ ধনীর একারই $15 বিলিয়ন এর উপর সম্পদ আছে বলে ধারণা। এক শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি দেখলে সেরকম চিত্রের সম্ভবনা দেখা দেয়। বাস্তব চিত্র কতটা ভয়ানক এটি তার আভাস।

$15 বিলিয়ন কতটুকু তা বুঝতে আমরা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের দিকে তাকাই। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩ ধনী কার্লোস স্লিম, বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ $55 থেকে $75 বিলিয়ন ডলার। বিশ্বে বিলিয়নেয়ার (প্রায় সাত হাজার আটশ কোটি টাকার মালিক) আছেন ১৪২৬ জন [2]। 
তালিকায় বাংলাদেশি কেউ নেই। কারণ তাদের অবৈধভাবে অর্জিত কালো টাকারও হিসেব নেই।

কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে এবং দুর্নীতি রুখে দিতে পারলে, সেই সাথে বাবসা-বিনিয়োগ-উদ্যোক্তা-শিল্প বান্ধব পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

“নেক্সট ইলেভেন” এ থাকা ১১ টি দেশের একটি বাংলাদেশ – একদিন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে এমন স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।


রেফারেন্সঃ

[1] Economy of Bangladesh
[2] http://www.forbes.com/sites/luisakroll/2013/03/04/inside-the-2013-billionaires-list-facts-and-figures/
[3] 2011 Bangladesh share market scam

No comments:

Post a Comment