Tuesday, April 15, 2014

জনতার ঐক্যের শক্তির মাধ্যমে অন্যায় এবং অন্যায়কারীকে রুখে দাঁড়ানো - ২

নাগরিক শক্তির স্থানীয় সমর্থকদের উদ্যোগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৪০-৫০ জন ডাকাত, তাঁদের অভিভাবকসহ ডাকাতির জীবন থেকে ফিরে নতুন জীবন শুরু করার শপথ নিয়েছে। 



"চকরিয়ায় ডাকাতি না করার শপথ


কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগর ঘোনা সাইক্লোন শেল্টারে গতকাল সোমবার বিকেল চারটায় চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ডাকাতদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়েছে।

ডাকাতেরা শপথবাক্য পাঠ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ জন্য তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেছেন। পুলিশ প্রশাসনও সর্বক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই শপথ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহামঞ্চদ ফরহাদ, জামিনে বেরিয়ে আসা ডাকাতসর্দার মনজুর আলম, ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। পরে শপথবাক্য পাঠ করান ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন।

ওই শপথ অনুষ্ঠানে ৪০-৫০ জন ডাকাত, তাঁদের অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। চকরিয়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাকাত রয়েছে এই সওদাগর ঘোনা গ্রামে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি যদি কাজে আসে তাহলে উপজেলায় ডাকাতির সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে। ফিরে আসবে স্বস্তি।"
"কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গিয়েছিলাম সরেজমিন প্রতিবেদন করার জন্য। বিষয়টা আগেই নির্ধারিত ছিল। কিন্তু থানা সদরে পৌঁছানোর পরপরই শুনলাম, আগের রাতে ভয়াবহ ডাকাতি হয়েছে এখানকার একটি বাড়িতে। নির্ধারিত বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখে ছুটে যাই সেই বাড়িটিতে। গিয়ে দেখি ডাকাতেরা বাড়ির লোকজনকে মেরে গুরুতর জখম করার পর সোনা, নগদ টাকাসহ মূল্যবান সবকিছুই নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়েছে। খোঁজখবর করার সময়ই শুনতে পাই, একই রাতে আরও কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। অবাক হয়েছিলাম গ্রামের লোকজনের প্রতিক্রিয়া দেখে। যেন এটাকেই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরা। থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বললাম। তাঁরাও অসহায়ত্ব পকাশ করলেন। জেনেছিলাম, শুধু আনোয়ারা না, পার্শ্ববর্তী বাঁশখালী বা চকরিয়ায়ও ডাকাতি প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ওই ঘটনার পরদিন প্রথম আলোয় আনোয়ারার ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে অবস্থার যে খুব পরিবর্তন হয়েছিল, তা-ও বলা যায় না।
গত ১৭ মার্চ চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা সাইক্লোন শেল্টারে ৪০-৪৫ জন ডাকাত ও তাঁদের অভিভাবকেরা এসে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে ঘোষণা দেন যে তাঁরা আর কোনো দিন ডাকাতি করবেন না। এমনকি এলাকায় কোনো ধরনের ডাকাতির ঘটনা হলে তাঁরাই খুঁজে এনে ডাকাতদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করবেন।
আবেগঘন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সভায়। ডাকাতদের কেউ কেউ অকপটে বলেছেন, অনেক অন্যায় করেছেন তাঁরা, একবার সুযোগ পেলে প্রায়শ্চিত্ত করবেন এবং বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন।


চকরিয়া এলাকায় চিংড়িঘেরে ডাকাতির বিষয়টি ছিল প্রায় নিয়মিত ঘটনা। তা ছাড়া বাড়িঘর বা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে গাড়ি আটকে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। ডাকাতদের এ রকম ‘আত্মসমর্পণ’ বা আত্মসংশোধনের ঘোষণায় নিশ্চয় কিছুটা স্বস্তি পাবেন ভুক্তভোগীরা।

ডাকাতিপ্রবণ এলাকা আনোয়ারা ও বাঁশখালীতেও খোঁজ নিয়েছি। সেখানকার সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, ডাকাতির ঘটনা সেখানেও আজকাল প্রায় নেই বললেই চলে।"

No comments:

Post a Comment