অর্থনীতির সূচকে পাকিস্তানকে টপকে বাংলাদেশ
"রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই পেছনে পড়েছে পাকিস্তান। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর হিসাবে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে আর পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে আরো অনেক বেশি হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেবল রপ্তানি বাণিজ্যই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি-নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়েছে, যতটা পারেনি পাকিস্তান। শিল্পের কাঁচামালের জোগানদাতা ও আমদানি-বিকল্প শিল্প কারখানা বিকশিত হওয়ায় শিল্প খাতে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমছে। আবার খাদ্য উৎপাদন পাকিস্তান আমলের ৯৬ হাজার টন থেকে বেড়ে তিন কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। ফলে খাদ্য আমদানি ব্যয়ও কমেছে। তাই রপ্তানি আয়ে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে পাকিস্তান ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। সেখানে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ৩৪ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয়ে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় সামগ্রিক বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অনেক কম। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাকিস্তানের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি সাত বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি বড় খাত হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সেদিক থেকেও পাকিস্তানকে বহু পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের কাছ থেকে পাকিস্তান রেমিট্যান্স পেয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার।
এসব সূচকে এত দূর এগিয়ে থাকার প্রভাবটা আরো বেশি স্পষ্ট করে দিয়েছে দুই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি আমদানি ব্যয়ের দেশ পাকিস্তানের রিজার্ভের পরিমাণ ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ওই দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হতে হয়। সেই হিসাবে, পাকিস্তানের রিজার্ভ তার চেয়েও কম। দেশটির তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ১১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আর বাংলাদেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধিকে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ আর পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৬ শতাংশ। পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ কম-বেশি ৬ শতাংশ হারে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। সেখানে পাঁচ বছরে পাকিস্তানের গড় জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বছরান্তে ২.৯ শতাংশ।
অন্যান্য সূচকেও অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মাথাপিছু সঞ্চয়ের হার প্রায় ২৮ শতাংশ, সেখানে পাকিস্তানের মাত্র ১৫ শতাংশ। সঞ্চয় কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশের জাতীয় মূলধন বিনিয়োগও কমে যায়। আর এর প্রভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমাটাও স্বাভাবিক।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নেও পাকিস্তানকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশ। ‘পাকিস্তান ইকোনমিক সার্ভে ২০১২-১৩’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশটির ১০ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ৫৮ শতাংশ। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। ১০ বছরের বেশি বয়স্কদের হিসাব নিলে এ হার আরো বাড়বে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইটে ‘দুই অর্থনীতির গল্প ১৯৭১-বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনা’ শিরোনামে ১৯৮০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সব সূচকের আগামী কয়েক বছরের সম্ভাব্য অগ্রগতি ও পতনের দিকনির্দেশনাও রয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইটটিতে। তুলনামূলক চিত্রে দেখানো হয়েছে যে বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে নিম্নমুখী। ওয়েবসাইটটিতে দুই দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার, জিডিপি অনুপাতে সামষ্টিক বিনিয়োগ, সঞ্চয়ের গতি-প্রকৃতি, মূল্যস্ফীতির হার তুলে ধরা হয়েছে। এসব সূচকের প্রতিটিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতি ও পাকিস্তানের পতনের কারণ সম্পর্কে সাইটটিতে সাধারণ মানুষের মন্তব্য চাওয়া হয়েছে।
কারান নামের এক পাকিস্তানি মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ শিগগিরই পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে ফেলবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘নতুন প্রিয় দেশ’ (নিউ ডার্লিং) হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের আগ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ আর শাসনের কারণে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নকাজে ব্যয় করা হতো। ফলে তখন পশ্চিম পাকিস্তান দ্রুত উন্নত হলেও পূর্ব পাকিস্তান নাজুক হয়ে পড়ছিল। ওই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যই আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন অন্য কারো শোষণ-বঞ্চনা নেই। নিজেদের কর্মকাণ্ডের সুফল আমরা পাচ্ছি। ফলে কেবল পাকিস্তানই নয়, অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বাংলাদেশ নানা দিক দিয়ে ভালো করছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভারতের প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।’ [1]The economy expanded at an annual rate of 4.7% in the three months to December, down from 4.8% in the previous quarter. [2]
The Gross Domestic Product (GDP) in Bangladesh expanded 6.01 percent in the fiscal year 2012/2013 from the previous year. GDP Annual Growth Rate in Bangladesh is reported by the Bangladesh Bank. From 1994 until 2013, Bangladesh GDP Annual Growth Rate averaged 5.6 Percent reaching an all time high of 6.7 Percent in June of 2011. [3]
সামাজিক সূচকে ভারত পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ
References
- পাকিস্তানকে টপকে গেছে বাংলাদেশ
- India's economy grows slower than expected
- BANGLADESH GDP ANNUAL GROWTH RATE
নাগরিক শক্তির পরিকল্পনা
বাংলাদেশের জিডিপির মোট আকার - $324.628 বিলিয়ন। ধরা যাক, শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগ করা হল এবং তাতে ১ বছরে পণ্য এবং সেবার আকার বাড়ল $108 বিলিয়ন। তাহলে মাথাপিছু জিডিপি হবে $2,776।
আমাদের হিসাবে মতে ২০১১ সালের শেয়ারবাজার ধ্বসে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বা প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার উপর অর্থ কারসাজির মাধ্যমে সরানো হয়েছে।
কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে এবং দুর্নীতি রুখে দিতে পারলে, সেই সাথে বাবসা-বিনিয়োগ-উদ্যোক্তা-শিল্প বান্ধব পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।" [1]
"জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে বর্তমান ৬% থেকে যত দ্রুত সম্ভব ১০% এ উন্নীত করা হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮% হলে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হতে ৯ বছর (rough estimate)লাগবে। হার ১০% হলে দ্বিগুণ হতে ৭ বছর (rough estimate) লাগবে। ১২% হলে দ্বিগুণ হতে ৬ বছর লাগবে। {(1+ 0.08)^x = 2, x = 9} {(1.10)^x = 2, x = 7.27} {(1.12)^x = 2, x = 6.12}
মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে কয়েক বছরে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকবে। ভারতের মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) $3,991, পাকিস্তানের $3,144, আর বাংলাদেশের $2,083; হিসাবটি খুব সহজ। মাথাপিছু জিডিপির দিক দিয়ে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতে দেশে উৎপাদিত মোট পণ্য ও সেবার পরিমাণ দেড়গুণ করতে হবে আর ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে দেশে উৎপাদিত মোট পণ্য ও সেবার পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। অন্যভাবে বললে, দেশে এখন যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যদি পণ্য / সেবা উৎপাদন দ্বিগুণ করতে পারে তবে সম্মিলিতভাবে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবো।" [2]
No comments:
Post a Comment