Sunday, January 5, 2014

জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় নাগরিক শক্তির ভূমিকা

দেশে এই মুহূর্তে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল জনগণের জানমালের নিরাপত্তা।

জনগণের জীবনের নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে বাকি সবকিছু অর্থহীন হয়ে যায়।

সংখ্যালঘুদের (সংখ্যালঘু শব্দটা আমাদের পছন্দ না। আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশী। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি সাপেক্ষে না চাইলেও শব্দটা আমাদের ব্যবহার করতে হয়।) সবচেয়ে বড় আতঙ্ক বিএনপি - জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে জামায়াতের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিধন শুরু হতে পারে। ২০০১ এ তার দৃষ্টান্ত আছে। এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জামায়াত যা করেছে, তা দেখে মনে হয়, এবার সেই ঘৃণ্য প্রক্রিয়া আরও গুরুতর হতে পারে। আওয়ামী লীগ যেভাবে বিরোধী দলীয় নেতাদের উপর দমন - নিপীড়ন চালিয়েছে, তাতে বিএনপি - জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে প্রতিশোধ- প্রতিহিংসা হতে পারে - এমন ভাবনা থেকে অনেকেই শঙ্কিত। মানবতাবিরধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যারা সক্রিয় ছিলেন তারাও অনেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। (আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সম্পূর্ণ গুজবের উপর ভিত্তি করে নিরাপরাধ মানুষকে খুন করতে জামায়াত একের পর এক প্রচেষ্টা চালাতে পারে।) আরেকটি ভয়ের ব্যাপার - জামায়াত নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিতে পারে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাতেও দেশের একটি বড় অংশ নিজেদের বঞ্চিত ভাবছেন এবং এই বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত এক্সট্রিমিসম বা জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটাতে পারে। শাহবাগের আন্দোলন বন্ধ করতে জামায়াত কি করেছে - তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। ককটেল বোমা, জ্বালাও - পোড়াও এর মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেই আমাদের আশঙ্কা।

আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ গীতা সেনদের, সংখ্যালঘুদের তথা জনগণের নিরাপত্তা দিতে শুধু ব্যর্থ হয়নি, বরং স্বীয় উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এবার তারা সর্বদলীয় সংখ্যালঘু হামলায় অংশ নিয়েছে।

যতদিন দেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না, ততদিন অবরোধ-হরতালে দেশ প্রায় অচল হয়ে থাকবে এবং দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে যাবে।

দেশের জনগণের দাবি দাওয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চৌর্যবৃত্তি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে - এমন সরকার দেশের মানুষ আর চায় না।

নাগরিক শক্তি সংখ্যালঘুদের তথা দেশের সকল জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সবার মাঝে একতার বন্ধন গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরুদের মাঝে বন্ধন গড়ে তুলবে। সবাই মিলে বাংলাদেশ - এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবে। একের উপর অন্যায় অন্যরা সহ্য করবে না।

অন্যায়কারীরা সংখ্যায় নগণ্য। জনগণের মাঝে ঐক্য নেই বলেই আজ অন্যায়কারীরা সুযোগ নিতে পারছে। জনগণের মাঝে একতা থাকলে অন্যায়কারীরা সুযোগ নিতে পারবে না। এ লক্ষ্যে এখন এই মুহূর্ত থেকে কাজ শুরু করতে হবে।

ক্ষমতায় গিয়ে জনসাধারণের নিরাপত্তাকে নাগরিক শক্তি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। এ লক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে আধুনিকায়ন, বিচার বিভাগে সংস্কার সহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। ইসলামী চেতনা যাতে ভুল পথে না যায় সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।


লেখা শেষ করে যা দেখলাম - চাঁপাতলায় শুধুই কান্না

আরও -
রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার চায় টিআইবি
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম কারও একার নয়
মানবিক প্রেমবোধ ও সহমর্মিতা
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে: মান্না
দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়?

"আমি মাঝে মাঝে কল্পনা করি আমি যদি এই দেশে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হতাম তাহলে আমার কেমন লাগতো। আমি জানি তাহলে গভীর হতাশায় আমার বুক ভেঙ্গে যেতো। আমি কোনো দোষ করিনি কিন্তু শুধুমাত্র একটি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়েছি বলে আমার উপর যে নৃশংস অত্যাচার করা হচ্ছে তার জন্যে আমার বুকে যেটুকু ক্ষোভ জন্ম নিতো তার চাইতে শতগুণ বেশি অভিযোগ হতো আমার চারপাশের নির্লিপ্ত মানুষজনকে দেখে। কেউ কোনো কথা বলছে না। নীরবে এক ধরনের করুণা নিয়ে আমাকে দেখছে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ হতো রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। প্রতিবার নির্বাচনের পর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হবার পর, রায় কার্যকর হবার পর আমাদের ওপর হামলা করা হবে। বি.এন.পি জামায়াত হামলা করবে, আওয়ামী লীগ বা বাম দলগুলো সেটা ঘটতে দেবে। খুব বেশী হলে নিরাপদ দুরত্বে থেকে প্রতিবাদ করবে কিন্তু বুক আগলে কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে না। এই দেশে আমি যদি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমার বার বার মনে হতো আমি এই দেশের মানুষ কিন্তু এই দেশটি আমাকে রক্ষা করছে না। আমি নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ করে বলতাম তুমি কেন আমাকে এমন একটি দেশে জন্ম দিয়েছ যেই দেশ আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেয় না? যেই দেশে আমাকে প্রতি মুহূর্তে আতংকে থাকতে হয়? কিন্তু আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নই, তাই প্রকৃতপক্ষে তাদের বুকের ভেতর যে গভীর দুঃখ ক্ষোভ হতাশা আর অভিমান পুঞ্জীভূত হয়ে আছে আমি সেটা কোনোদিন অনুভব করতে পারব না।

আমার মনে হয় এই দেশ নিয়ে আমাদের যত কল্পনা, যত স্বপ্ন, যত পরিকল্পনা সবকিছুকে পিছনে সরিয়ে সবার আগে আমাদের এখন একটি লক্ষ্য টেনে নিয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে এই দেশে একটি হিন্দু শিশু যেন নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় তার মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারে। গভীর রাতে ধর্মান্ধ মানুষের উন্মত্ত চিৎকারে তাদের যেন উঠতে না হয়, আগুনের লেলিহান শিখায় আপনজনের আতংকিত মুখ দেখতে না হয়। একজন হিন্দু কিশোরীকে যেন তার বাবার রক্তশূন্য মুখের দিকে তাকিয়ে থরথর করে কাপঁতে কাপঁতে বলতে না হয়, "এখন কী হবে বাবা?"

আমরা ...... শুধুমাত্র হিন্দু এবং অন্য সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা চাই যেন তারাও ঠিক আমাদের মত এই দেশটিকে তাদের নিজেদের ভালোবাসার দেশ বলে ভাবতে পারে। তীব্র অভিমানে তাদের বুক ভেঙ্গে যেন আর কোনদিন খান খান হয়ে না যায়।

আমি কার কাছে এটি চাইব জানি না, তরুণ প্রজন্মের কাছে চাইছি। তোমরা আমাদেরকে একটি নূতন বাংলাদেশ উপহার দাও। যে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্প চিরদিনের জন্যে মুছে দেওয়া হবে। আমি জানি তোমরা পারবে।"

 - তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রার্থনা: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হতাশা প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান
জামায়াতের ভাবাদর্শ
হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ সৃষ্টিকারী দেশের শত্রু : সুলতানা কামাল
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা প্রকাশ
মুক্তিযুদ্ধের সাহস নিয়ে জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে: ইমরান
নিজভূমে পরবাসী হওয়াই নিয়তি?
অঘটন-উত্তর বোধোদয়, নাকি রাজনীতি?
বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও: আমাদের সুপারিশ
গণজাগরণ মঞ্চের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে


সাম্প্রদায়িকতা বা সমাজের বিভেদকারী উপাদানগুলোর শিকড় যখন অন্যায়, অবিচার, অপরাধ, দুর্নীতি আর অসত্যের শিকড়ের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন সে শিকড়কে খুঁজে বের করা এবং উপড়ে ফেলা এক দুঃসাধ্য কাজ হয়ে ওঠে। সুতরাং আমাদের সংস্কৃতি তথা রাজনীতি, সমাজনীতি, আর্থিক ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে না ভাবলে সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন করা যাবে না।
যত দুঃসাধ্যই হোক, কাজটা তো শুরু করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জাগরণ এ ব্যাপারে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমরা তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকি।

No comments:

Post a Comment