ঠিক যেভাবে আমরা কে কোন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছি তার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না, একইভাবে আমরা কে কোন ধর্মের অনুসারি হয়ে জন্মেছি তাতেও আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি আর আপনি আজকে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে মুসলিম হয়ে জন্মেছি। কিন্তু আমি বা আপনি তো এই বাংলাদেশে কোন হিন্দু বা বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম নিতে পারতাম। কয়জনকে দেখেন আজ ধর্ম পরিবর্তন করতে?
এবার আর "হতে পারতো" না, ধরে নেই, আপনার জন্মই হয়েছে বাংলাদেশের কোন হিন্দু পরিবারে। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই একদল সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী আপনার উপর হামলা চালাল। আপনি কোন অপরাধ করেননি, দুর্নীতি করেননি, ছিনতাই করেননি, যা করেছেন তা হল মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে একটা হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন! কেমন লাগবে?
[2] Akd Contract
এবার আর "হতে পারতো" না, ধরে নেই, আপনার জন্মই হয়েছে বাংলাদেশের কোন হিন্দু পরিবারে। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই একদল সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী আপনার উপর হামলা চালাল। আপনি কোন অপরাধ করেননি, দুর্নীতি করেননি, ছিনতাই করেননি, যা করেছেন তা হল মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে একটা হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন! কেমন লাগবে?
আমাদের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন সনাতনী ধর্মাবলম্বি। এরপর মুসলমান শাসনামলে এ এলাকা মুসলিম প্রধান হয়ে ওঠে। ব্রিটিশদের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিতে ওয়েস্টার্ন কালচারেরও অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
সব ধরণের সংস্কৃতি মিলে হল - বাঙালি সংস্কৃতি।
একটা উদাহরণ দেবো?
আমাদের বিয়ের আগে এঙ্গেইজমেন্ট হয় - ওটা ওয়েস্টার্ন কালচার থেকে শেখা। গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানগুলো হয় সনাতনী সংস্কৃতি [1] অনুসারে। আকদ [2] ইসলামিক। বউ ভাতটাও সনাতনী সংস্কৃতির।
আরেকটা উদাহরণ?
আমরা পায়ে ধরে সালাম করি। “সালাম” করাটা ইসলামিক। আর “পায়ে ধরা”টা সনাতনী সংস্কৃতির। দুটা মিলে “পায়ে ধরে সালাম”!
বাঙালি সংস্কৃতির সৌন্দর্য হল এই বৈচিত্র্য।
কাজেই এই বৈচিত্র্য-সৌন্দর্য কে অস্বীকার করে কেউ যখন (কালের বিবর্তনে পরিণত হওয়া) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায় তখন তা আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতির সাথে বড় বেমানান দেখায়।
"স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের প্রধান পরিচয় ছিল বাঙালি। ধর্ম ছিল প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। অথচ স্বাধীনতার চার দশক পর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ২১ থেকে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, জনসংখ্যার এই ক্রমাবনতির কারণ আমাদের রাজনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবীরা অনুসন্ধান করেননি; এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগও লক্ষ করা যায়নি।
আমরা অনেকেই আইয়ুব-মোনায়েম স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজকে এই জীবনসায়াহ্নে এসে মনে হয়েছে, আমার প্রকৃত ঠিকানা কী? অথচ একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবিনি। প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হবে; রাষ্ট্রের পরিচালকেরা রাজনীতি ও প্রশাসনকে সে ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনজীবনে আস্থা ফিরে আসবে।
লক্ষণীয়, সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো যখনই হয়, একদল আরেক দলের ওপর দায় চাপায় এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে দায়বদ্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসী যে-ই হোক, হামলাকারী যে-ই হোক, তাকে ছাড়া হবে না। অথচ যশোরে আমরা অন্য রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে আসছেন। কেউ বলছেন, আসামি তাঁর আত্মীয়। কেউ বলছেন, আসামি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। আবার কেউ বলছেন, আগে আসামি জামায়াত করত, এখন সরকারি দল করে। তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁদের এই অসহায়ত্বের কথা যেন আমি আরও ওপর মহলে বলি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় এল। আমরা বলেছিলাম, ২০০১ সালের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠিত হোক। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তখন হাইকোর্টের একটি নির্দেশনায় সাহাবুদ্দীন কমিশন গঠিত হয়েছিল। প্রায় ১৫ হাজারের মতো ঘটনা সেদিন সাহাবুদ্দীন কমিশনের কাছে উত্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে হাজার পাঁচেক ঘটনা নিয়ে কমিশন তদন্ত করেছিল। তদন্তের রিপোর্ট ২০১২ সালে পেশ করা হলেও কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন কিংবা দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
..... সাঈদীর রায়ের পরে তারা সত্যি সত্যি যুদ্ধ ঘোষণা করল। তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়। কোথাও কোথাও ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা যে ধারায় আটক হয়, সেগুলোতে দুই দিন পরে জামিনে বেরিয়ে আসে। আবার দেখা যায়, স্থানীয় নেতারা হিন্দুদের ওপর চাপ দেন সম্প্রীতির নামে একধরনের আপস করার জন্য। তখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ে।
সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমাদের যে আইনগুলো আছে, সেসব দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে না। নারীদের সুরক্ষায় যেমন নারী নির্যাতন দমন আইন আছে, একইভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, সেই হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ আইন প্রণীত হওয়া দরকার। এই আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
আমাদের সংবিধানে সব নাগরিক সমান কথাটি বলা আছে। একই সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে সংবিধান আবদ্ধ হলো। ফলে রাজনীতি, প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আবার আমাদের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলগুলোতেও সাম্প্রদায়িক চক্রের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেখা গেছে।"
সব ধরণের সংস্কৃতি মিলে হল - বাঙালি সংস্কৃতি।
একটা উদাহরণ দেবো?
আমাদের বিয়ের আগে এঙ্গেইজমেন্ট হয় - ওটা ওয়েস্টার্ন কালচার থেকে শেখা। গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানগুলো হয় সনাতনী সংস্কৃতি [1] অনুসারে। আকদ [2] ইসলামিক। বউ ভাতটাও সনাতনী সংস্কৃতির।
আরেকটা উদাহরণ?
আমরা পায়ে ধরে সালাম করি। “সালাম” করাটা ইসলামিক। আর “পায়ে ধরা”টা সনাতনী সংস্কৃতির। দুটা মিলে “পায়ে ধরে সালাম”!
বাঙালি সংস্কৃতির সৌন্দর্য হল এই বৈচিত্র্য।
কাজেই এই বৈচিত্র্য-সৌন্দর্য কে অস্বীকার করে কেউ যখন (কালের বিবর্তনে পরিণত হওয়া) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায় তখন তা আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতির সাথে বড় বেমানান দেখায়।
"স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের প্রধান পরিচয় ছিল বাঙালি। ধর্ম ছিল প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। অথচ স্বাধীনতার চার দশক পর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ২১ থেকে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, জনসংখ্যার এই ক্রমাবনতির কারণ আমাদের রাজনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবীরা অনুসন্ধান করেননি; এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগও লক্ষ করা যায়নি।
আমরা অনেকেই আইয়ুব-মোনায়েম স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজকে এই জীবনসায়াহ্নে এসে মনে হয়েছে, আমার প্রকৃত ঠিকানা কী? অথচ একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবিনি। প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হবে; রাষ্ট্রের পরিচালকেরা রাজনীতি ও প্রশাসনকে সে ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনজীবনে আস্থা ফিরে আসবে।
লক্ষণীয়, সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো যখনই হয়, একদল আরেক দলের ওপর দায় চাপায় এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে দায়বদ্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসী যে-ই হোক, হামলাকারী যে-ই হোক, তাকে ছাড়া হবে না। অথচ যশোরে আমরা অন্য রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে আসছেন। কেউ বলছেন, আসামি তাঁর আত্মীয়। কেউ বলছেন, আসামি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। আবার কেউ বলছেন, আগে আসামি জামায়াত করত, এখন সরকারি দল করে। তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁদের এই অসহায়ত্বের কথা যেন আমি আরও ওপর মহলে বলি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় এল। আমরা বলেছিলাম, ২০০১ সালের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠিত হোক। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তখন হাইকোর্টের একটি নির্দেশনায় সাহাবুদ্দীন কমিশন গঠিত হয়েছিল। প্রায় ১৫ হাজারের মতো ঘটনা সেদিন সাহাবুদ্দীন কমিশনের কাছে উত্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে হাজার পাঁচেক ঘটনা নিয়ে কমিশন তদন্ত করেছিল। তদন্তের রিপোর্ট ২০১২ সালে পেশ করা হলেও কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন কিংবা দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
..... সাঈদীর রায়ের পরে তারা সত্যি সত্যি যুদ্ধ ঘোষণা করল। তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়। কোথাও কোথাও ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা যে ধারায় আটক হয়, সেগুলোতে দুই দিন পরে জামিনে বেরিয়ে আসে। আবার দেখা যায়, স্থানীয় নেতারা হিন্দুদের ওপর চাপ দেন সম্প্রীতির নামে একধরনের আপস করার জন্য। তখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ে।
সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমাদের যে আইনগুলো আছে, সেসব দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে না। নারীদের সুরক্ষায় যেমন নারী নির্যাতন দমন আইন আছে, একইভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, সেই হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ আইন প্রণীত হওয়া দরকার। এই আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
আমাদের সংবিধানে সব নাগরিক সমান কথাটি বলা আছে। একই সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে সংবিধান আবদ্ধ হলো। ফলে রাজনীতি, প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আবার আমাদের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলগুলোতেও সাম্প্রদায়িক চক্রের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেখা গেছে।"
রেফরেন্স
[1] Mehndi [2] Akd Contract
আরও
No comments:
Post a Comment