Friday, February 14, 2014

এরা কি ছাত্র সংগঠন নাকি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য

"রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র হাতে চড়াও হয়েছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিস্তল উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করে ও ইটপাটকেল ছোড়ে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, ছড়রা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফয়সাল আহমেদ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম বিল্লাহ ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সালামকে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।"

সূত্র - রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রলীগ, পুলিশের গুলি


"রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত রোববারের হামলার সময় যে ছয়জনকে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে, তাঁদের পাঁচজনই ছাত্রলীগের নেতা। বাকি একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গতকাল পর্যন্ত অস্ত্রধারী কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
যে পাঁচজনের পরিচয় জানা গেছে তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহাম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ও ফয়সাল আহাম্মেদ, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম বিল্লাহ এবং বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম।
গত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রথম আলোকে জানান, নাসিম আহাম্মেদ ও শামসুজ্জামানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাসিম আহাম্মেদ ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান হত্যা মামলার আসামি। তাঁকে ২০১২ সালের ২ অক্টোবরও ক্যাম্পাসে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। পরদিন পত্রিকায় সে ছবি ছাপা হয়েছে।
সুদীপ্ত সালামও এর আগে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা না করে পুলিশ অসামাজিক কাজের অভিযোগে মামলা করেছিল। ওই মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
দুই বছরেও প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে না পারায় গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি নেতা-কর্মীদের নিয়ে গিয়ে নাসিম আহাম্মেদ তাঁর বিভাগের পাঁচটি কক্ষের কাচের দরজা এবং সাতটি জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। ভেঙে ফেলা হয় কক্ষগুলোর সামনে থাকা প্রায় ১২টি ফুলের টব। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে নাসিম আহাম্মেদ অস্ত্র বের করে তাঁদের হুমকি দেন এবং ধারণ করা ছবি মুছে ফেলতে বাধ্য করেন।
পুলিশ পেটানোর অভিযোগও আছে সুদীপ্তের বিরুদ্ধে। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর শাহ মখদুম হলে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন তিনি। তবে এ ঘটনায় তখন কোনো মামলা হয়নি।"

সূত্র - অস্ত্রধারীরা ধরা পড়েনি


"রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের করা চার মামলার কোনোটিতেই ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী কোনো নেতাকে আসামি করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে আন্দোলনকারী প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা ও শিক্ষার্থীদের।

মতিহার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুন নূর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা অভিযোগ দিয়েছে, আমরা সে অনুযায়ীই মামলা করেছি।’ "

সূত্র - অস্ত্রধারীদের আসামি করা হয়নি


"এক বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীর মারফত জানতে পারলাম, যে পিস্তল দিয়ে রাবির ছাত্রলীগ নেতা ইমন গুলি করছিলেন, তার ব্র্যান্ডের নাম বেরেটা টমক্যাট। দাম তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুখ্যাত ক্যাডার এবং পরে সাংসদ হওয়া অভি নাকি চা-সিগারেট খেতেন না হাত কাঁপবে বলে। ছাত্রশিবিরের বন্দুকবাজদেরও তুখোড় নামডাক আছে। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অভিকে না পেলে শিবিরের ক্যাডারদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনা শিখতে পারে।

তিন লাখ সাড়ে তিন লাখ টাকার অস্ত্র যে চালায়, তাকে চালাতে দলের কত টাকা লাগে? সেই টাকা কোথা থেকে জোগাড় হয়?

আর যাঁদের তাক করে সে গুলি করেছে, তাঁরা ‘সামান্য’ কয় টাকার বেতন বাড়ানো নিয়ে আন্দোলন করা ‘সস্তা’ ছাত্রছাত্রী।

পত্রিকা আর টিভিতে ইমনদের পিস্তলের বাহাদুরির পাশাপাশি এ রকম কিছু প্রজার ছিদ্রময় পিঠের ছবি এসেছে। অবশ্য গুলি-বন্দুক কিনতে সরকারকে কত টাকা ব্যয় করতে হয়, তা আমরা জানি না। সেই টাকায় কতজনের পড়ালেখার খরচ রাষ্ট্র দিতে পারত, তা-ও জানা নেই। পুলিশের অস্ত্র, জলকামান, টিয়ার গ্যাস ইত্যাদি কিনতে তো টাকার অভাব হয় না; অভাব হয় কেবল বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রাজশাহীর ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। গত বছর জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছিল, তাদের কারোরই কি শাস্তি হয়েছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়েরকে যারা কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তাদের কি আটক করে আদালতে তোলা হয়েছে? এসব আশ্বাস মনকে ক্লান্ত করে। বিশ্বজিতের হত্যাদৃশ্য সমগ্র দেশবাসীর হূদয়ে যে হাহাকার আর ধিক্কারের জন্ম দিয়েছিল, তার ধাক্কায় খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যে ছাত্রলীগকে মাস্তানি, খুনোখুনি, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকতে দেখা যায়, যে সংগঠনের হাতে রয়েছে ইমনের পিস্তলের চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র, সেই ছাত্রলীগ নিয়ে আমরা কী করব? ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসকে আমরা ঘৃণা করেছি, ছাত্রলীগের বেলায় কি সেই ঘৃণার মনকে ঘুমিয়ে রাখব?

ইতিমধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা-কর্মীসহ ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। সেই পাঁচ তরুণ শিক্ষকেরই বা কী হবে, যাঁরা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সামনে বুক চিতিয়ে বলেছিলেন, ‘ওদের মারতে হলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে যেতে হবে।’ সেই পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত হবে।"

সূত্র - ছাত্রলীগের দামি পিস্তল ও কিছু সস্তা জীবন


"রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীরাই সংগঠনের কমিটিতে বড় পদ পেয়েছেন। গত কমিটিতে এ রকম অন্তত চারজন স্থান পেয়েছেন, যাঁরা অতীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপরে চড়াও হয়েছিলেন।

ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিন। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় তৌহিদকে পুলিশের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। পরদিন সে ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। গত বছরের ২২ আগস্ট দুর্বৃত্তরা তাঁর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এর জন্য ছাত্রলীগ শিবিরকে দায়ী করে।

২০১২ সালের ২ অক্টোবরের ওই ঘটনায় তৌহিদের পাশাপাশি পিস্তল রেব করে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সহসভাপতি আখেরুজ্জামান ওরফে তাকিমকে। ছাত্রত্ব না থাকলেও ২০১২ সালের জুন মাসে গঠিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সহসভাপতির পদ পেয়েছিলেন। এই বছরের ১৫ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং পরে মারা যান। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন আখেরুজ্জামান ও তখনকার সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন। ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আখেরুজ্জামানের বাঁ পায়ের ও একটি হাতের রগ কেটে দেয়। এরপর তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।"

সূত্র - অস্ত্রবাজেরা উঁচু পদে


"সন্ত্রাস চালিয়ে, শিক্ষার্থীদের জোর করে বের করে দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর এখন সেখানে প্রশাসন, সরকার দলীয় সন্ত্রাসী আর পুলিশ রাজত্ব করছে। এদের মুখে যতই মাস্তানী হাসি থাকুক এরা পরাজিত। বিজয়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যারা ক্ষতবিক্ষত হয়েও পাবলিক বা সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষার নৈতিক লড়াই অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানে হল এটি সমাজের, সর্বজনের, সকল মানুষের আগ্রহী ও মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দায়িত্বগ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। অর্থবিত্ত বা ক্ষমতা নয়, মেধাই যাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে একমাত্র নির্ধারক হয় তা নিশ্চিত করে সমাজে উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত ও নিশ্চিত করাই এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হবার কথা। সরকারের অর্থ বলে কিছু নেই, সবই জনগণের অর্থ। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক নয়, মালিক সমাজ, সমাজের সর্বজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এমনকিছু করতে পারে না যা সর্বজনের শিক্ষার ক্ষেত্রটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিংবা তার সুযোগ সংকুচিত হয়। সরকার বা মন্ত্রণালয়কে খুশি করা বা তাদের মনমতো চলা নয়, মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় চলতে হবে ‘সর্বজনের মালিকানা, কর্তৃত্ব এবং শিক্ষার অধিকার’ নিশ্চিত করবার নীতি কেন্দ্রে রেখে।"

আনু মুহাম্মদ

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্তদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকারি ছাত্র সংগঠনের অস্ত্রধারীদের প্রতিরোধ করে সরকারকে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে হবে।



আরও



"সিলেটের মদনমোহন কলেজে ভর্তি বাণিজ্য করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা লুটকারী সেই ‘বদমাশ’ ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শুক্রবার বিকেলে তিনি কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশকে এ নির্দেশ দেন।
এসময় অর্থমন্ত্রী ছাত্রলীগের স্থগিত রাখা কলেজ কমিটির সভাপতি অরুণ দেবনাথের নেতৃত্বে ভাঙচুর করা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।"

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে অপরাজনীতির এটি একটি রিয়েল পিকচার।" 

সূত্র - ‘বদমাশ’ ছাত্রনেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ অর্থমন্ত্রীর 

No comments:

Post a Comment