Monday, September 29, 2014

বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান সংশোধন

নাগরিক শক্তি ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধান সংশোধন করবে। 
  • (পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, 
  • ৭০ এর খ অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাংসদদের নিজস্ব বিবেক-বিবেচনার ভিত্তিতে মতামত - ভোট দেওয়ার সুযোগ প্রদান 
  • বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিরোধী দলের সদস্য এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হবে এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনা হবে। 

  • সরকারের নির্বাহী বিভাগ (Executive Division), আইন বিভাগ (Legislative Division) ও বিচার বিভাগ (Judiciary Division) এর মাঝে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং 
  • কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারগুলোর মাঝে ক্ষমতা বন্টন করে

সংবিধানে সংশোধনী আনা হবে।

সংশোধনীর জন্য সারা দেশে একটি "হ্যাঁ" - "না" ভোট আয়োজন করা হবে। ভোটে সংশোধনীগুলো একটি লিস্ট আকারে থাকবে এবং জনগণ প্রতিটি সংশোধনীকে "হ্যাঁ" কিংবা "না" ভোট দিতে পারবেন। 




(20.08.14)


বর্তমান সংসদ বিচারক অপসারণে অভিসংশন প্রথা ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে।

একটি বেসরকারি চ্যানেলের টক শো তে দেখলাম -
একজন দর্শক প্রশ্ন করছেন -
"যেহেতু সাংসদরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেহেতু বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেই কি পদ্ধতিটি বেশি গণতান্ত্রিক না?" 

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা গণতন্ত্রের মূল ব্যাপারটির দিকে লক্ষ্য করি।
গণতন্ত্রের বিকল্প হল রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা (China তে Communist Party একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে)।
রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মূল সমস্যা হল - "জবাবদিহিতার অভাব"। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা দল - যা খুশি করতে পারবে - কৃতকাজের জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না।
এতে জনগণের চাওয়া পাওয়া, এমনকি অধিকার লঙ্ঘিত হয়।

গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হল - "জবাবদিহিতা"
শাসকশ্রেণী কৃতকাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে - যা চায় করতে পারবে না।

"জবাবদিহিতা" প্রতিষ্ঠার একটি ভিত্তি - সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ। শাসকশ্রেণী জনগণের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে - জনগণ ভোটের মাধ্যমে "জবাবদিহিতা" নিশ্চিত করবে।

কিন্তু সরকার পরিচালনা করার সময়ও "জবাবদিহিতা" চর্চার প্রয়োজন রয়েছে।
আর "সরকার পরিচালনা করার সময়" জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার  একটি উপায় স্বাধীন নিরপেক্ষ শক্তিশালী বিচারবিভাগ।   

সরকারের
"নির্বাহী বিভাগ" (প্রধান মন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদ, সচিবালয়, স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাহী বিভাগ)
আর
"আইন বিভাগ" (আমাদের জাতীয় সংসদ)
আইনের বিরুদ্ধে, সংবিধানের মূলভিত্তির বিরুদ্ধে কিছু করলে
"বিচার বিভাগ""জবাবদিহিতা" নিশ্চিত করবে।
যেমন সরকারের আইনবিভাগ সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে যায় - এমন কোন আইন পাশ করলে - বিচার বিভাগ তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবে।   
  
উন্নত গণতন্ত্রের দেশ যেমন - যুক্তরাষ্ট্রে আমরা দেখি -

  • Executive Division - নির্বাহী বিভাগ (যার নেতৃত্বে US President),
  • Legislative Division - আইন বিভাগ (Senate এবং House of Representatives নিয়ে Congress) এবং 
  • Judiciary Division - বিচার বিভাগ (যার সবচেয়ে উপরে US Supreme Court)

সরকারের এই তিনটি Division একটি অপরটির "জবাবদিহিতা" নিশ্চিত করে। 
কোন একটি Division যা ইচ্ছে তাই - করতে পারবে না - অপর একটি Division এর হাতে Constitution এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে - যাতে না করতে পারে।
United States র Constitution টি-ই এমনভাবে রচিত - যা "জবাবদিহিতা" নিশ্চিত করে।
US Government একটি Federated Government (অনেকগুলো States নিয়ে - যারা প্রত্যেকে অনেকখানি স্বাধীনভাবে নিজ নিজ State Government পরিচালনা করে) এ স্থানীয় সরকার প্রতিটিতেও অনুরূপ Executive, Legislative, Judiciary Division রয়েছে।

কাজেই -
"যেহেতু সাংসদরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেহেতু বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেই কি পদ্ধতিটি বেশি গণতান্ত্রিক না?"

এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে - না।

বরং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য "জবাবদিহিতা" অত্যাবশ্যক এবং "জবাবদিহিতা" প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক।
বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে সংসদ বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করবে এবং এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে। সংসদ সংবিধানের মূলনীতি বিরোধী আইন প্রণয়ন করলেও বিচারবিভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে।  


আমরা মনে করি - বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া -
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল,
একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাখা,
সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন
- এসবের ধারাবাহিকতায় দেশে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পথে আরেকটি ধাপ

বর্তমান সরকার এভাবে একের পর এক অগণতান্ত্রিক আইন প্রণয়ন করলে - শেষ পর্যন্ত জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নামতে বাধ্য হবে এবং সরকার জনগণকে বাঁধা দিতে পারবে না কারণ তা হবে জনগণের মুক্তভাবে মত প্রকাশ এবং সমাবেশ করার সংবিধান স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘন।


নাগরিক শক্তি ক্ষমতায় গিয়ে জনগণ, বিরোধী দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আদর্শ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে।  

No comments:

Post a Comment