Friday, May 9, 2014

খুনি কাউন্সিলর নূর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য বন্ধে অগ্রগতি

খুনি কাউন্সিলর নূর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য বন্ধ হচ্ছে। নূর হোসেন দ্রুত গ্রেপ্তার হোক। নারায়ণগঞ্জে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। 


অগ্রগতি 




"নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের(নাসিক) প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৫ জন অপহরণের মামলার প্রধান আসামি আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এসময় রক্তমাখা একটি মাইক্রোবাসসহ আইনজীবী চন্দন সরকারের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দুইজনকে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম উদ্ধারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।

ওই সময় তিনি বলেন, একটি শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে যার মধ্যে অনেক দাগ রয়েছে। সেটা আসলে রক্তের দাগ কি না পরীক্ষা করে দেখা হবে। এছাড়াও নূর হোসেনের পাসপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় টেকপাড়া এলাকায় অবস্থিত নূর হোসেনের বাড়ির চারপাশ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে বেলা ১১টায় নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। অভিযান চলাকালে গণমাধ্যমের কোন কর্মীকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) শহিদুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা স্বীকার করেছেন।"

সূত্র - নূর হোসেনের বাড়িতে রক্তমাখা মাইক্রোবাস, মোবাইল ফোন, আটক ২







"কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, উচ্ছেদে বাধা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, কাঁচপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজি, নদী দখল, মাদক ব্যবসাসহ অনেক কিছুরই নিয়ন্ত্রক তিনি ও তাঁর লোকজন। তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।

গত রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে অপহূত কাউন্সিলর নজরুলসহ ছয়জনের লাশ গতকাল বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে বন্দর থানার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। একই সড়ক থেকে প্রায় একই সময়ে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়ির চালক ইব্রাহিম। গতকাল উদ্ধার হওয়া লাশের একটি ইব্রাহিমের।


আওয়ামী লীগ-সমর্থক নজরুলের পরিবারের অভিযোগ, বিরোধের জের ধরে নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। রোববার ও সোমবার নূর হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে মঙ্গলবার থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এলাকার লোকজন জানান, ট্রাকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন পরে চালক হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর সিদ্ধিরগঞ্জে তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ ১৩টি মামলা হয়। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার সভাপতিও হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি এলাকায় ছিলেন না। ওই সময় তিনি ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। গত বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম পথ শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুরে পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ সবকিছু এখন নিয়ন্ত্রণ করেন নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন।

পরিবহনে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১২ সালের আগস্টে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। র‌্যাবের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, অনেক দিন ধরে কাঁচপুর সেতু ও চিটাগাং রোডে স্থানীয় হোসেন চেয়ারম্যানের (নূর হোসেন) নেতৃত্বে কিছু মাস্তান পরিবহনগুলো থেকে প্রতিদিন দু-তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে পরিবহনকর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে।

চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকেরা নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন ও বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দেন। পরে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর হস্তক্ষেপে ওই চাঁদাবাজি বন্ধ হয়।


নদী দখল ও বিআইডব্লিউটিএর মামলা: বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কাঁচপুর সেতুর নিচে শীতলক্ষ্যার তীর দখল করে নূর হোসেনদের গড়ে তোলা বালু ও পাথরের ব্যবসা উচ্ছেদ করা হলেও নবম সংসদ নির্বাচনের পর আবারও নদী দখল করে এ ব্যবসা করছেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কাঁচপুর সেতুর নিচে শীতলক্ষ্যার তীর অবৈধভাবে দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা গড়ে তোলার অভিযোগে নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ২০১০ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেছিলেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা। মামলায় সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া এবং নদীতীরের প্রায় ৮০০ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ আনা হয়। গত কয়েক বছরে ওই দখল উচ্ছেদে আট-দশবার অভিযান চালানো হয়। মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২২টি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য-জুয়া: অভিযোগ রয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ট্রাক টার্মিনালে এক বছরের বেশি সময় ধরে মেলার নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর। মেলায় অবাধে মাদকও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে এ মেলা বন্ধ করতে গত ১৬ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার চিঠি দিলেও মেলা বন্ধ হয়নি।

অপহরণের পরে রবি ও সোমবার নূর হোসেনের ফোন খোলা থাকলেও মামলার পরে মঙ্গলবার থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।"




"নূর হোসেনের কাঁচপুর শিমরাইল বাসভবনের সামনে ও পেছনে ২টি পুকুরে রাখা হতো ফেনসিডিল আর অস্ত্র। সীমান্ত থেকে সরাসরি কাভার্ড ভ্যান কিংবা ট্রাকযোগে ফেনসিডিল ও অস্ত্র নিয়মিত প্রতি রাতে উক্ত পুকুর পাড়ে এনে নামানো হতো। গভীর রাতে বস্তায় বস্তায় এসব ফেনসিডিল ও অস্ত্র পুকুরে রাখার দৃশ্য দেখতো এলাকাবাসী।

নূর হোসেনের সিমরাইল বাসভবনে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মূল মনিটর। এখানে বসে মাদক ও অস্ত্রসহ আন্ডার গ্র্যাউন্ডের সকল কার্যক্রম মনিটর করতো নূর হোসেন। ইতিমধ্যে পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি মাইক্রোবাস জব্দ ও ১১ জনকে আটক করে। ঐ দিনই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থা রহস্যজনকভাবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। ফলে সহজেই নূর হোসেনের ক্যাডার বাহিনী ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণকৃত মূল সফটওয়্যার সরিয়ে ফেলেছে।" [2]

রেফরেন্স

  1. ভেঙে ফেলা হচ্ছে আজমেরী ওসমানের সেই টর্চার সেল
  2. নূর হোসেনের দুই পুকুরে রাখা হতো অস্ত্র, মাদক

No comments:

Post a Comment